বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট টিমে সাতক্ষীরা থেকে উঠে আসা ক্রিকেটারের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। সৌম্য মোস্তাফিজদের পথে হাঁটছে সাতক্ষীরার তরুণ ক্রিকেটাররা। মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী তাদের মধ্যে একজন। বয়সভিত্তিক ক্রিকেটের গণ্ডি পেরিয়ে যুব বিশ্বকাপ হয়ে জাতীয় দলের দরজায় কড়া নাড়া একজন মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী

জাতীয় দলে অভিষেকের অপেক্ষায় থাকা মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী বর্তমানে বাংলাদেশ- এ টিমের হয়ে খেলছেন এবং স্ট্যান্ডবাই হিসেবে ছিলেন এশিয়া কাপের একাদশে। বর্তমানে টি-টোয়েন্টি ওয়ার্ল্ড কাপের স্কোয়াড থাকার অপেক্ষায়। দেথ ওভারে ভালো বল করা মৃত্যুঞ্জয় আছেন নির্বাচকদের নজরে।

ইতোমধ্যে মৃত্যুঞ্জয় বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে ভালো করার পাশাপাশি ফাস্ট ক্লাস ক্রিকেটেও তার জাত চিনিয়েছেন। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ ও জাতীয় লিগে ভালো করার পাশাপাশি গত বিপিএলে হেট্টিক সহ অসাধারণ নৈপুণ্য দেখিয়েছেন।

জন্মস্থান ও পরিবার

সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার হিজলদি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরি। তার সম্পূর্ণ নাম মোঃ মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী নিপুন এবং ডাকনাম মৃত্যুন। বাবা তোহাজ্জল হোসেন ছিলেন একজন স্কুল শিক্ষক এবং মা গৃহিনী। বড় ভাই ও বাবা-মা সহ বর্তমানে ঢাকায় বসবাস করছেন।

মৃত্যুঞ্জয়ের বাবা শিক্ষকতা জীবন শেষ করে বর্তমানে অবসরে আছেন এবং বড় ভাই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করে বর্তমানে চাকরি জীবনে কর্মরত আছেন। বাবা তোফাজ্জল হোসেনের স্বপ্ন মৃত্যুঞ্জয় কে ক্রিকেটার বানানোর কিন্তু সাতক্ষীরায় ক্রিকেটার হওয়ার পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা না থাকায় ঢাকায় এসে মৃত্যুঞ্জয়কে ভর্তি করে দেন সিসিএ ক্রিকেট একাডেমিতে।

মৃত্যুঞ্জয়ের ক্রিকেটার হয়ে ওঠার গল্প

মৃত্যুঞ্জয়ের বড় ভাইয়ের পড়াশোনা ও তার ক্রিকেট ক্যারিয়ারের কারণে তার বাবা-মা, পরিবার সহ ২০১০ সালে ঢাকায় চলে আসেন। ২০১২ সালে ভর্তি হন অবহানি ক্রিকেট একাডেমিতে। শুরুর দিকে ঢাকায় মৃত্যুঞ্জয়দের সময়টা ভালো ছিল না।মৃত্যুঞ্জয়ের ভাইয়ের চাকুরির সুবাদে তাদের সমস্যা কেটে যায়

১১ বছর বয়সে দিপু রায় চৌধুরী স্যারের ক্রিকেট কোচিং স্কুলে ভর্তি হন। এরপর ভর্তি হন এহসান স্যারের একাডেমিতে। ঢাকা মহানগর থেকে তার বয়সভিত্তিক ক্রিকেট খেলার শুরু। পেস বোলিংটা মৃত্যুঞ্জয়ের সহজাত ছিল বলেই দ্রুত বয়সভিত্তিক দলের সিঁড়ি ভেঙে বাংলাদেশ যুবদলের জায়গা করে নেয়।

২০১৮ সালে অনুর্ধ-১৭ দলের হয়ে ভারত সফরে গিয়ে আফগানিস্তান অনূর্ধ্ব-১৭ দলের বিপক্ষে খেলতে ভারত সফরে যান। সেই সফরে দারুন সব কাটার ও রিভার্সিং দিয়ে প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের বিধ্বস্ত করে নিজের জাত চেনান সাতক্ষীরার তরুণ মৃত্যুঞ্জয়। এরপর ইংল্যান্ড সফরে অনূর্ধ্ব-১৯ ত্রিদেশীয় সিরিজে ভালো পারফর্ম করে যুব বিশ্বকাপ দলে জায়গা করে নেন।

মৃত্যুঞ্জয়ের বাবা, ওয়াসিম আক্তারের ভক্ত হওয়ায় তিনি ছেলেকে বাঁহাতি পেস বোলার হিসেবে দেখতে চেয়েছেন। ছেলে মৃত্যুঞ্জয়ও বাবার স্বপ্ন পূরণে বদ্ধপরিকর। ব্যাটিংয়ে ভালো দক্ষতা থাকলেও হয়ে ওঠেন একজন নিখোঁদ পেস বলার।ডেথ ওভারের বোলিংটাই তার পছন্দ তাইতো নিজেকে ডেথ ওভারের কার্যকরী বলার হিসেবে তৈরি করেছেন।

মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী এর ধর্ম

“মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী” নামটি শুনতে সনাতন ধর্মালম্বীদের মতো হলেও আসলে মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী এর পূর্ণ নাম মোঃ মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী নিপুন। ধর্মীয় দিক থেকে মোঃ মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী নিপুন একজন মুসলিম ক্রিকেটার। সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার হিজলদি গ্রামের একটি মুসলিম সম্ভ্রান্ত পরিবারে তার জন্ম তার বাবার নাম তোহাজ্জল হোসেন।

মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী এর পড়াশোনা

ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় খুব ভাল ছিলেন মৃত্যুঞ্জয়। সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত খুব ভালোভাবে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পেরেছিলেন। কিন্তু ভালো ক্রিকেট খেলা ও বাবার স্বপ্ন পূরণে মনোযোগী হওয়ায় সঠিকভাবে পড়াশোনা করা হয়ে ওঠেনি মৃত্যুঞ্জয়ের। প্রথমে মৃত্যুঞ্জয়ের বাবা ছেলেকে নিয়ে সন্দিহান থাকলেও পরবর্তীতে বিভিন্ন জায়গায় ভালো খেলে যুবদলের সুযোগ পেলে তিনি চিন্তা মুক্ত হন।

মৃত্যুঞ্জয় এর প্রিয় খেলোয়ার ও আইডল

প্রতিটা খেলোয়ড়ের একজন আইডল বা প্রিয় খেলোয়াড় থাকে তেমন মৃত্যুঞ্জয়ের প্রিয় খেলোয়াড় রয়েছে। আরেক যুব বিশ্বকাপ দলের সদস্য রিপন মন্ডলের মত মৃত্যুঞ্জয়ও চান বোলিংএ দক্ষিণ আফ্রিকার গতি তারকা ডেইলি স্টেইনের মত গতির ঝড় তুলতে। তবে ডেইলিস্টার তার প্রিয় খেলোয়ার বাইরে নয়।

মৃত্যুঞ্জয়ের প্রিয় খেলোয়ার ইংল্যান্ডের বেন স্টোকস এবং বাংলাদেশের সাকিব আল হাসান। দুজনই অলরাউন্ডার এবং দুই জনই খেলায় তাদের দলের জন্য বিশেষ অবদান রাখের পাশাপাশি সাকিব আল হাসানের ঠাণ্ডামাথায় খেলা মৃত্যুঞ্জয়কে মুগ্ধ করে।

মৃত্যুঞ্জয় এর বয়স

২০২২ সালের ২৮ জানুয়ারি মৃত্যুঞ্জয়ের ২১ বছর পূর্ণ হয়। বর্তমানে তার বয়স ২১ বছর ৭ মাস ১১ দিন। মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী ২০০১ সালের ২৮ জানুয়ারি জন্ম গ্রহণ করেন।

মৃত্যুঞ্জয় এর উচ্চতা

মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী দীর্ঘকায় একজন বাহাতি পেসার। মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী এর উচ্চতা ৫ ফুট ১০ ইঞ্চি যা তাকে তার গতিময় বোলিং করতে সাহায্য করে। ৫ ফুট ১০ ইঞ্চি উচ্চতা ও বাহাতি বোলার হিসেবে মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী বোলিং-এ গতি, কাটার, রিভার্সিং ও ইয়র্কার বল করায় সুবিধা পায়।

 

মৃত্যুঞ্জয় এর খেলার ধরণ

মূলত মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী একজন বাহাতি পেসার। পেস বলিংটার পাশাপাশি লোয়ারঅর্ডারে ব্যাটিং করে দলের জয় ভালো ভূমিকা রাখতে পারেন। বাহাতি হার্ডহিটার এই ব্যাটসম্যান দ্রুত রান তুলাতে পারদর্শী। বোলিংয়ে তার শক্তিমত্তার জায়গা হল লেন্থে হিট করা এবং ডেট ওভারে কাটার, রিভার্সিং ও ইয়র্কার দেওয়া।বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ ও জাতীয় লিগে ভালো করার পাশাপাশি গত বিপিএলে হেট্টিক সহ অসাধারণ নৈপুণ্য দেখিয়েছেন।

Check Also

Mrittunjoy Chowdhury: Biography, Religion, Height, Age, Education, Sports, Place of birth and family

Mrittunjoy Chowdhury is a upcoming pacer of Bangladesh national cricketer team. He was par…